কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে
দাঁত শিরশির করা এমন একটি সমস্যা যা বেশ অনেকের মধ্যেই দেখা যায়।ঠান্ডা জাতীয় খাবার,গরম চা,বা টক ফল খাওয়ার সময়ও দাঁতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা বা শিরশির ভাব অনুভূত হয়।এই সমস্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে,তবে বিশেষ করে ভিটামিন এর অভাবও অন্যতম কারণ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক,মূলত কোন কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে এবং কিভাবে তা পূরণ করা বা সমাধান করা যায়।
পেইজ সূচিপত্রঃ
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করেঃ
বিশেষ করে ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম জনিত অভাবে দাঁত শিরশির করে
ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামঃ দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করতে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম এক সাথে কাজ করে। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের সহায়তা করে। যদি এই উৎপাদন গুলোর অভাব হয় তবে দাঁতের এনামেল দুর্বল হয়ে যায় এবং দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে,এবং এ থেকেও দাঁত শিরশির হতে পারে।
লক্ষণঃ দাঁত এবং হাড়ের দুর্বলতা হতে পারে।
প্রতিকারঃ
পর্যাপ্ত সূর্যলোক গ্রহণ নিতে হবে এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাইতে হবে,যেমন -মাছ, ডিমের কুসুম, এবং দুগ্ধজাত পণ্য খাইতে হবে।
ভিটামিন সিঃ
দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি এর অভাবে মারি দুর্বল হয়, এবং ফুলে যেতে পারে বা রক্তপাত হতে পারে।তাই দুর্বল মাড়ির কারণে দাঁতের গোড়ার সংবেদনশীল অংশ উন্মুক্ত হয়ে দাঁত শিরশির করতে পারে।
প্রতিকারঃভিটমিন সি জাতীয় খাবার খাইতে হবে।যেমন-আমলকি,পেয়ারা,কমলা,লেবু,মালটা,পেঁপে এছাড়াও রয়েছে শাকসবজি যেমন পালং শাক,এসব খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি পূরণ করা যায়।
ক্যালসিয়ামঃঅনেক সময় কিছু ওষু্ধের জন্য,যেমন-অ্যান্টিডিপ্রেশন ড্রাগ বা ক্যালসিয়াম চ্যালেন ব্লগার,মাড়ি ফোলা বা শিরশির করার কারণও হতে পারে।
আবার আরো কিছু সমস্যার কারণে হতে পারে-
মাড়ি ক্ষয় বা দাঁতের এনামেলের ক্ষয়,দাঁতের মাড়ি সরে গেলে,বা এনামেল দুর্বল হয়ে গেলে ঠান্ডা কিছু খেলে বা মুখে নিলে দাঁত শিশির করতে পারে।
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের ক্ষয় হয়ঃ
বিশেষ কিছু কারণে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে তার মধ্যে বিশেষ কারণ ভিটামিন ডি,ভিটামিন ডি এর অভাবে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে,কারণ এটি শক্তিশালী দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে থাকে।এছাড়াও ভিটামিন সি এর কারণে হতে পারে।কারণ ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়,যেমন মাড়ি ফোলা বা রক্তপাত হয়,যা পরোক্ষভাবে দাঁতের ও স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভিটামিন ডিঃএটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে,যা দাঁত ও হারকে মজবুত করতে সাহায্য করে,পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে শরীর যেমন ভালোভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না,ফলে দাঁত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্ষয়ের দিকে ঝুকি বাড়ে।
ভিটামিন সিঃভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হতে পারে,যার ফলে মাড়ি ফুলে যেতে পারে,শুধু তাই নয়,এবং রক্তপাত হয়।যদিও বলছিনা সরাসরি দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে,তবে মাড়ির সমস্যা দাঁতের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
হাড় ও দাঁতের জন্য কোন ভিটামিন প্রয়োজনঃ
হাড় ও দাঁতের জন্য ভিটামিন ডি সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ,কারণ এটি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে,এছাড়াও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন কে,ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,এবং ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর মতো অন্যান্য ভিটামিন ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ,যা ক্যালসিয়াম শোষণ ও হাড়ের খনিজ করণ ও ক্লোজেন উৎপাদন এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
দাঁতের জন্য কোন ভিটামিন দরকারঃ
দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন গুলো হল-
ভিটামিন ডি:এটি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং যা দাঁত ও হাড়কে খুবই শক্তিশালী ও মুজবত করে তোলে।
ভিটামিন সি:মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই সাহায্য করে ভিটামিন সি। এবং রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ:ভিটামিন এ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দাঁতের জন্য খুব উপকারী এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ভিটামিন বি১: দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন বি১ এ একটি অপরিহার্য ভিটামিন।
দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়ঃ
দাঁত শিরশির বন্ধ করতে আমরা ঘরোয়া ভাবে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে পারি যেমন-হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে মুখ কুলকুচি করতে পারেন।এছাড়াও নরম জাতীয় ব্রাশ এবং ব্যাথা কমাতে দাঁতের জন্য তৈরি টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।দাঁতের শিরশির কমাতে আরো কিছু ঘরোয়া উপায় হল নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং ক্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন।
লবণাক্ত জল দিয়ে কুলকুচি:এক গ্লাস হালকা গরম জলের সাথে ১/২ চা চামুচ লবণ মিশিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধরে কুলকুচি করুন।এতে কিছুটা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
নরম ব্রাশ ব্যবহার: নরম ব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁতের মাড়ি বা এনামেল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম যা সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে।
দাঁতের জন্য টুথপেস্ট:এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করুন যা দাঁতের সংবিধানশীলতা জন্য তৈরি করে,যা দাঁত কে সুরক্ষা রাখতে সাহায্য করে।
ক্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট:ক্লোরাইড দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা খাবার ও পানি এড়িয়ে চলুন:সরাসরি ঠান্ডা জাতীয় খাবার ও পানীয় মুখের মধ্যে নিলে শিরশিরানি বাড়তে পারে তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো হবে।
সঠিক ব্রাশ করার পদ্ধতি:খুব জোরে ব্রাশ করবেন না হালকা ভাবে এবং আলতো ভাবে ব্রাশ করুন।
দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির উপায়:
শিশির থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ কিছু টিপস রয়েছে তার মধ্যে যেমন-টুথপেস্ট মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা,ঠান্ডা টক ও মিষ্টি খাবার জাতীয় এড়িয়ে চলবেন,এতে করে শিরশিরানী বাড়িয়ে দিতে পারে।দাঁত ব্রাশ করার সময় অবশ্যই নরম ব্রাশ ব্যবহার করবেন এতে মাড়ির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।এবং যদি বেশি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতের পরীক্ষা করান,দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলে বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে ডেন্টিস্ট সঠিক সমাধান আপনাকে দিতে পারবে।
দাঁত শিরশির বন্ধ করার টুথপেস্টঃ
দাঁত শিরশির বন্ধ করার জন্য সাধারণত সেনসিটিভ টুথপেস্ট দাঁতের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, কেননা সেনসিটিভ টুথপেস্ট পটাশিয়াম ও নাইট্রেট বা স্ট্রন্টিয়া ক্লোরাইড এর মত উৎপাদন থাকে যা দাঁতের ভেতর থেকে সংবেদনশীল অংশকে সুরক্ষিত করে এবং শিরশিরানি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত ব্রাশ করা,প্রতিদিন দুইবার ব্রাশ করুন,তিন থেকে চার মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করবেন।খাদ্য অভ্যাস ক্যালসিয়াম ও ফসফেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন-দুধ পানির দই এনামেল শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।এবং এসিডিক খাবার পরিহার করতে হবে,যেসব খাবারে দাঁতের জন্য ক্ষতিকর এই যেমন ধরুন চিনিযুক্ত খাবার,এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন,এছাড়াও সঠিকভাবে ব্রাশ করুন,শক্ত ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করবেন না,এতে করে এনামেল ক্ষতি করতে পারে।এছাড়াও যদি সমস্যা গুরুতর হয় তাহলে একজন দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।এতে সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারবেন।
দাঁত শিরশির করলে করণীয় কি:
দাঁত শিরশির করলে করণীয় এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করুন যা বিশেষ ভাবে দাঁতের সংবেদনশীল কমানোর জন্য সাহায্য করে।পানীয় খুব গরম বা ঠান্ডা খাবার এরিয়ে চলতে হবে,মিষ্টি ও টক জাতীয় খাবার খেলে বাড়াতে পারে,সঠিকভাবে ব্রাশ করতে হবে একটি নরম জাতীয় ব্রাশ ব্যবহার করুন,এবং জোরে ব্রাশ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন,মুখের স্বাস্থ্যবিধে মেনে চলতে হবে,দিনে দুইবার দাঁতস ব্রাশ করুন,হালকা গরম পানির সাথে ১/২ চামুচ লবন মিশিয়ে দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন।এছাড়াও অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার:
দাঁত শিরশির করার কারণগুলো হলো-
এনামেলের ক্ষয়: দাঁতের উপরের প্রতিরক্ষামূলক স্তর এনামেল ক্ষয় হলে ভিতরে স্নায়ু উম্মুক্ত হয়ে যায় এবং ঠান্ডা গরম বা মিষ্টি খাবারের কারণেও শিরশির করতে পারে।
মাড়ির ক্ষয়:মাড়ি সরে গেলে দাঁতের মূল উন্মুক্ত হয়ে যায় এর থেকেও শিশির হয়।
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করা: দাঁতের জন্য চিনিযুক্ত খাবার খুবই ক্ষতিকর,দাঁত ক্ষয় বৃদ্ধি করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি ঘটায় তাই আমাদের চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ঠিক নয়।
দাঁত পরিষ্কার না রাখা: নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না রাখলে বা ব্রাশ না করলে, দাঁতের গোড়ায় প্লাক এবং টার্টার জমতে পারে যা দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতি সৃষ্টি করে।
ভিটামিনের অভাব:ভিটামিন সি এবং কে এর অভাবে মারে দুর্বল হতে পারে।
ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে: অনেক সময় দেখা যায় শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার জনিত কারণে ও দাঁত শিরশির করতে পারে।
প্রতিকার:
নিয়মিত সঠিকভাবে ব্রাশ করুন দাঁত ও মারি পরিষ্কার রাখুন। টুথপেস্ট পরিবর্তন সংবেদনশীল দাঁতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন,চিনি ও এসিডযুক্ত খাবার কম খান,এবং ফল এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ পনির ইত্যাদি বেশি করে খাবেন।ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন।ডেন্টাল চেকআপ করান এবং দাঁতের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url